দুর্ঘটনার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য যে সকল সাবধানতা মেনে চলা হয় তাকে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বলে। আর যে সকল সরঞ্জাম কার্যক্ষেত্রে অপারেটরদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয়, সেগুলোই হলো ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম (Personal Protective Equipment - PPE)। নিম্নে উল্লেখ্য করা হলো বিভিন্ন প্রকার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামের (Personal Protective Equipment -PPE) নাম ও এদের ব্যবহার-
নাম | ছবি | কী কাজে ব্যবহৃত হয় |
---|---|---|
১. সেফটি এ্যাপ্রোন | কারখানায় ধুলা, বালি, লুব্রিকেন্ট, ধাতব চিপস, আগুনের স্ফুলিঙ্গ ও তাপ ইত্যাদি থেকে জামা কাপড় ও শরীর রক্ষা করার জন্য সেফটি এ্যাপ্রোন ব্যবহার করতে হবে। | |
২. সেফটি হ্যান্ড গ্লাভস | কারখানায় কাজ করার সময় বিভিন্ন প্রকার গরম ধাতু, ভারি যন্ত্রপাতি উঠানামার সময় হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। | |
৩. সেফটি মাস্ক বা গ্যাস মাস্ক | কারখানায় বা যেকোনো স্থানে কাজ করার সময় বিষাক্ত গ্যাস ও ধুলাবালি থেকে রক্ষার জন্য সেফটি মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। | |
৪. সেফটি সু (জুতা) | এটি সাধারণ সু নয়, এর উপরিভাগে এক প্রকার মেটালের প্রলেপ দেওয়া থাকে। পায়ের নিরাপত্তার জন্য সেফটি সু ব্যবহার করতে হবে। | |
৫. সেফটি বেল্ট | ৭-৮ ফিট উপরে কাজ করার সময় নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য এটি পরিধান করতে হয়। |
এ প্রসঙ্গে নিম্নে কারখানাসহ অন্যান্য কর্মস্থলের কর্মীদের শারীরিক বিপর্যয় এড়ানোর জন্য ব্যবহার্য সরঞ্জাম ও পোশাক-পরিচ্ছদের বিবরণ দেয়া হলো ।
১. চোখের নিরাপত্তা সরঞ্জাম (Eye Protecting Equipment) : চক্ষু বা চোখ মানবদেহের এমন একটি ইন্দ্রিয়, যার অভাবে একজন মানুষ কর্মে সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পড়ে এবং তার মুখাকৃতির বিকৃতি ঘটে। নিম্নোক্ত কারণে দৈনন্দিন কাজকর্মসহ কলকারখানায় যান্ত্রিক পরিবেশে কর্মরত কর্মীগণ চক্ষু দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। যথা—
• ক্ষতিকারক আলোকরশ্মি। • যন্ত্রপাতি হতে বিচ্ছুরিত পাথর কণা, ধাতব কণা, অ্যাব্রাসিভ গ্রিট, ধুলাবালি ইত্যাদি । • ক্ষতিকারক ধোঁয়া, গ্যাস, ফেনা ইত্যাদি। • দ্রুতগতির উড়ন্ত বস্তু । • ছিটকে পড়া ক্ষতিকারক তরল পদার্থ । • উত্তপ্ত গলিত ধাতু। চোখের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মপরিবেশে নিম্নোক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করা প্রয়োজন— • প্রোটেকটিভ স্পেকট্যাকলস (Protective Spectacles) • কভার গগলস (Cover Goggles ) । • ডাস্ট গগলস (Dust Goggles ) । • মাইনারস গগলস (Miners Goggles)। • স্পেকট্যাকলস্ উইথ সাইড শিল্ড (Spectacles with side shields ) । •কাপ গগলস (Cup Goggles ) । •মেন্টারস্ গগলস (Melter's Goggles)। •ওয়েল্ডারস্ গগলস (Welder's Goggles ) । • কেমিক্যাল গগলস (Chemical Goggles ) । |
২. মুখমণ্ডলের নিরাপত্তা (Face Protection) :- কারখানাতে কর্মস্থলের বিকিরিত তাপ, ক্ষতিকর রশ্মি, গলিত ধাতু, রাসায়নিক পদার্থ, উত্তপ্ত তরলসহ অন্যান্য পদার্থের ক্ষতিকর সংস্পর্শ হতে রক্ষার জন্য মুখমন্ডলে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কর্মক্ষেত্রের কাজ ও সম্ভাব্য বিপদের ধরনের ভিত্তিতে নিরাপত্তা সরঞ্জাম নির্বাচন করতে হয়। নিম্নে কয়েকটি সরঞ্জামের সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা হলো—
• হ্যান্ড হেল্ড শিল্ড (Hand held shield) : হ্যান্ড হেল্ড শিল্ড ওয়েল্ডিং কাজ পরিদর্শন, ট্যাক ওয়েল্ডিং এবং ছোটখাটো ওয়েল্ডিং কাজের জন্য ব্যবহার করা যায়।
• ওয়েন্ডিং হেলমেট (Welding helmet) : আর্ক ওয়েল্ডিং এর সময় উৎপন্ন অতিবেগুনি রশ্মি, গলিত ধাতুর বিচ্ছুরণ, উড়ন্ত বস্তু ইত্যাদির ক্ষতিকর প্রভাব হতে মুখমণ্ডলকে রক্ষার জন্য ওয়েল্ডিং হেলমেট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
• ফেস শিল্ড (Face shield) : রাসায়নিক পদার্থ স্থানান্তর, হালকা গ্রাইন্ডিং অপারেশন করাতকল বা করাত দিয়ে কাটা ব্লাস্ট ফরনেসসহ অন্যান্য তাপীয় উৎস হতে মুখমণ্ডলকে রক্ষার জন্য ফেস শিল্ড ব্যবহৃত হয়।
• ব্লাস্টিং হেলমেট (Blasting helmets) : ব্লাস্টিং হেলমেট ম্যানুয়াল ব্লাস্টিং করার সময় উচ্চ চাপে নিক্ষেপিত বালু, গার্নেটে মেটাল গ্রিট ইত্যাদির আঘাত হতে মুখমণ্ডল রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়।
• অ্যাসিড প্রুফ হুডস্ (Acid proof hoods) : অ্যাসিড প্রুফ হুডস ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের বিপদ হতে মুখমণ্ডল এবং গলাকে রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
নিজে করো : পাশের চিত্রটি লক্ষ করো। এটি কী কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে? এটি একটি ব্লাস্টিং হেলমেট। কলকারখানায় বিপজ্জনক কাজ করার সময় এটি মাথায় পরিধান করলে মাথা ও মুখমণ্ডল সুরক্ষিত থাকে। এটি উচ্চ তাপমাত্রা এবং ছিটকে আসা বিভিন্ন ধাতব কনা থেকে মুখ, চোখ রক্ষা করে। তবে এটি এমন ভাবে তৈরি করা উচিৎ যেনো এটি হালকা হয়, এর ভিতরটা শীতল থাকে এবং আরামদায়ক হয়। অন্যথায় এটি পরিধান করে কাজ করাটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। |
---|
৩. পায়ের পাতার নিরাপত্তা (Protecting the Feet) : কারখানায় প্রায়ই বৈদ্যুতিক শক, পায়ের পাতার উপর ভারী বস্তুর পতন, গলিত ধাতু ও তপ্ত তরলের সংস্পর্শ, রাসায়নিক পদার্থের স্পর্শ, শক্ত বস্তুর সঙ্গে হোঁচট লাগা ইত্যাদি কারণে পায়ের আঙ্গুলসহ পায়ের পাতা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ সমস্ত দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য নিরাপদ জুতা বা সেফটি সু ( Safety Shoes) ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। কলকারখানা ও অন্যান্য কর্মস্থলের সম্ভাব্য বিপদের ধরনের উপর ভিত্তি করে সেটি সু-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
• লেদার সু উইথ উড সোলস (Leather shoes with wood soles) : উত্তপ্ত এবং স্যাঁতসেঁতে ভিজা কর্মস্থলে এ ধরনের নিরাপদ জুতা ব্যবহার উপযোগী। ডেয়ারি এবং অন্যান্য পানীয় প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানায় এ জুতা ব্যবহৃত হয়।
• মেটাল ফ্রি সু (Metal free shoe ) : অগ্নি দুর্ঘটনা, বৈদ্যুতিক শক এবং বিস্ফোরণ সংক্রান্ত ঝুঁকিতে থাকা কর্মস্থলে এ ধরনের সেফটি সু ব্যবহৃত হয়।
• সেটি সুজ উইথ মেটাটারসাল গার্ডস (Safety shoes with metatarsal guards) : এ সেফটি সু ভারী মালামাল স্থানান্তরের কাজে নিয়োজিত কর্মীগণ ব্যবহার করে থাকেন।
• গেইটার টাইপ সু (Gaiter type shoe ) : ফিতাবিহীন এ ধরনের জুতা সাধারণত গলিত ধাতু ছিটকে পড়ার সম্ভাবনাপূর্ণ কর্মস্থল এবং ওয়েল্ডিং কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
• রিইনফোরসড সোলস্ সু (Reinforced soles shoes) : এ ধরনের নিরাপদ জুতা নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর সুচালো অংশ, যেমন— পেরেক, তারকাটা ইত্যাদির বর্ধিত সুচালো অংশের আঘাত প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত হয়।
🚻 শ্রেণির কাজ : নিচের ছকে পায়ের পাতার নিরাপত্তায় ব্যবহৃত কিছু সরঞ্জামের নাম উল্লেখ আছে। এদের কাজ লেখো।
সরঞ্জাম | কাজ |
---|---|
মেটাল ফ্রি সু | |
গেইটার টাইপ সু | |
লেদার সু উইথ উড সোলস |
৪. পায়ের নিরাপত্তা (Leg Protection) : বিভিন্ন ধরনের ইনজুরি থেকে পায়ের গোছা হতে হাঁটু পর্যন্ত। অংশকে রক্ষার জন্য লেগিং (Legging) ব্যবহার করতে হয়। যে সকল কর্মী গলিত ধাতুর আশপাশে কাজ করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রয়োজনে এ ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তা ছাড়া সিমেন্ট ফিনিশিং (Cement Finishing) এবং টাইলস সেটিং (Tiles Setting) এর কাজে নিয়োজিত কর্মীগণকে নি-প্যাড (Knee pads) ব্যবহার করতে হয়। যে সকল কর্মস্থলে গলিত ধাতু, স্পার্ক, তাপ ইত্যাদি হতে বিপদের আশঙ্কা থাকে, সেখানে অ্যাসবেসটস (Asbestos ) অথবা, চামড়ার তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত। আবার অ্যাসিড (Acids), অ্যালকালিস ( Alkalis) এবং গরম পদার্থের বিপদ প্রতিহত করার জন্য প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম রাবার এবং প্লাস্টিকের তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়।
৫. মাথার নিরাপত্তা (Protecting the Head) : মাথাকে পড়ন্ত বা উড়ন্ত বস্তুর আঘাত, ধাক্কা ও ঠোকালাগা জনিত আঘাত এবং ব্যক্তির পতনজনিত আঘাত হতে রক্ষার জন্য মাথায় মজবুত হ্যাট ব্যবহার করা আবশ্যক। এছাড়া মাথাকে আঘাত, বৈদ্যুতিক শক, পানি, তৈল, আর্দ্রতা ইত্যাদির সংশ্রব ও বিপদ হতে রক্ষার জন্য হ্যাট ব্যবহার করতে হয়। হ্যাট তৈরি করার জন্য ল্যামিনেটেড প্লাস্টিক, গ্লাস ফাইবার, অ্যালুমিনিয়াম সংকর ইত্যাদি পদার্থ ব্যবহার করা হয়। তবে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি হ্যাট বৈদ্যুতিক শক প্রতিরোধে সক্ষম নয়। এ ধরনের হ্যাট শুধুমাত্র আঘাত প্রতিরোধে সক্ষম। বর্তমানে প্লাস্টিকের তৈরি শক্তিশালী হ্যাট ওয়েল্ডিং মাস্ক (Welding mask), মাইনারস ক্যাপ ল্যাম্প (Miner's cap lamp), হিয়ারিং এইড (Hearing aid) ইত্যাদি সংযোজনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে।
৬. কানের নিরাপত্তা (Ear Protecting) : দীর্ঘসময় কলকারখানায় যন্ত্রপাতির উচ্চ শব্দের মধ্যে অবস্থানের ফলে ক্রমাগত শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের মারাত্মক ক্ষতি হয়। যে সকল কর্মস্থলে শব্দের তীব্রতা ৮৫ ডেসিবেল (Decibel) এর অধিক, সে সমস্ত কর্মস্থলে কাজ করায় সময় কানের মধ্যে ব্যথা অনুভূত হয়। এমন কর্ম-পরিবেশে কানের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার ব্যতিরেকে দীর্ঘদিন ঐ স্থানে কাজ করলে ক্রমাগত শ্রবণশক্তি হ্রাস পাবে। তাই যেকোনো কোলাহলপূর্ণ ও উচ্চশব্দযুক্ত কর্ম-পরিবেশে কাজে নিয়োজিত হওয়ার শুরু হতে, কানের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত। নিম্নে কানের নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা উল্লেখ করা হলো
• ইনসার্ট টাইপ প্রোটেকটরস (Insert type protectors ) : এ ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্লাস্টিক রাবার, ফোম, মোম এবং তুলা দিয়ে তৈরি করা হয়। এ ইয়ার প্লাগ ব্যবহারের ফলে কর্মস্থলে উচ্চমাত্রার শব্দ বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও কানের কোন প্রকার ক্ষতি হয় না।
• মাফ টাইপ (Muff types) শব্দ প্রতিরোধ সরঞ্জাম : কাপ বা মাফ টাইপ শব্দ প্রতিরোধক সরঞ্জাম এমন একটি সরঞ্জাম; যা কর্মীর কানকে সম্পূর্ণভাবে আবৃত করে রাখে। লিক প্রুফ সিলবিশিষ্ট মাফ টাইপ শব্দ প্রতিরোধী সরঞ্জামের কার্যকারিতা খুবই ভালো। কারণ বহিঃকর্ণকেও এ ধরনের শব্দ প্রতিরোধী সরঞ্জাম রক্ষা করে।
৭. আঙ্গুল, হাতের তালু এবং হাতের নিরাপত্তা (Protecting Fingers Palms and Hands) : দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজকর্ম হতে শুরু করে কারখানার যন্ত্রপাতি চালানো, কোন কিছু উঠানো-নামানো, এমনকি ধরাছোঁয়া ও নাড়াচাড়া করার জন্যও হাতের স্পর্শ অপরিহার্য। তাই হাতে আঘাত পাওয়ার প্রবণতাও সর্বাধিক। হাতের উল্লেখযোগ্য বিপদগুলো হলো— কেটে যাওয়া, আঁচড় লাগা, থেঁতলানো, অগ্নিদগ্ধ হওয়া, হাড়ে চিড় ধরা, হাড় ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি। হাতকে এ ধরনের বিপদ প্রতিরোধ উপযোগী কতিপয় নিরাপত্তা সরঞ্জামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করা হলো।
• লেদার গ্লোভস (Leather gloves) : লেদার গ্লাভস বৈদ্যুতিক স্পার্ক, তাপ, বিচ্ছুরিত ধাতব কণা, খসখসে বস্তু ইত্যাদির সংঘাত হতে হাতকে নিরাপদ রাখার জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
• রাবার গ্লোভস (Rubber gloves ) : এ ধরনের গ্লাভস বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে নিয়োজিত ইলেকট্রিশিয়ানগণকে ব্যবহার করতে হয়। রাবার গ্লোভসকে সরবরাহ লাইনে কাজ করার সময় ব্যবহার করতে হলে, নির্দিষ্ট সময় পরপর গ্লোভস এর ডাই- ইলেকট্রিক শক্তি পরীক্ষা করতে হবে।
• অ্যাসবেসটস গ্লোভস (Asbestos gloves) : এ ধরনের গ্লাভস ব্যবহারের ফলে হাত দগ্ধ হওয়া এবং তাপের ক্ষতিকর প্রভাব হতে রক্ষা পায়।
• মেটাল মেশ গ্লোভস (Metal mesh gloves ) : মেটাল মেশ গ্লাভস ছুরি, চাকু এবং অন্যান্য ধারালো, খসখসে ও সুঁচালো জিনিসজপত্রের আঘাত থেকে হাতকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
• কোটেড ফেব্রিক গ্লোভস (Coated fabric gloves ) : এই গ্লোভস গাঢ় রাসায়নিক পদার্থ নাড়াচাড়া করার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। তা ছাড়া জ্যাকিং হাউজ ও খাদ্য নাড়াচাড়ার কাজেও কোটেড ফেব্রিক গ্লোভস ব্যবহার করা যায়।
• ভিনাইল গ্লোভস (Vinyl gloves) : ভিনাইল গ্লোভস রাসায়নিক এবং ক্ষয়কারী পদার্থ নাড়াচাড়া করার জন্য ব্যবহার হয়। তা ছাড়া পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ স্থানান্তরের কাজেও এই গ্লাভস খুবই উপযোগী।
• কটন গ্লোভস ( Cotton gloves) : আঁচড় লাগা, ক্ষয় হওয়া, ধুলাবালি ও ময়লা আবর্জনা ইত্যাদি হতে এ ধরনের গ্লাভস হাতকে রক্ষা করে। তবে অতিরিক্ত খসখসে ধারালো এবং ভারী বস্তু নাড়াচাড়া করার জন্য কটন গ্লোভস ব্যবহার উপযোগী নয়।
🚻 শ্রেণির কাজ : নিচের ছকে হাতের নিরাপত্তায় ব্যবহৃত কিছু সরঞ্জামের নাম দেয়া হলো। এদের কাজ উল্লেখ করো।
সরঞ্জাম | কাজ |
---|---|
লেদার গ্লোভস | |
রাবার গ্লোভস | |
ভিনাইল গ্লোভস | |
মেটাল মেশ গ্লোভস | |
কটন গ্লোভস |
৮. শরীরের কাঁধ হতে হাঁটু পর্যন্ত অংশের নিরাপত্তা (Safety of the Protruding Part of the knee from the Shoulden of the Body) : শরীরের এ অংশকে বিভিন্ন ধরনের বিপদ হতে রক্ষার জন্য এ্যাপ্রোন এবং কভার অল (Apron and cover all) ব্যবহার করা প্রয়োজন। এ্যাপ্রোন বিভিন্ন পদার্থের তৈরি হয়ে থাকে। যেমন- চামড়া, মোটা কাপড়, ফেব্রিক, অ্যাসবেসটস ইত্যাদি। এ্যাপ্রোন শরীরকে তাপ, উত্তপ্ত ধাতব কণা, অতি উজ্জ্বল বিচ্ছুরিত আলো, যন্ত্রপাতি এবং মালামালের ধারালো ও খসখসে অংশের বিপদ হতে রক্ষা করে। এ্যাপ্রোন ব্যবহারে ক্ষতিকর ময়লা, ধুলাবালি ও অন্যান্য পদার্থ সরাসরি শরীরের সংস্পর্শে আসতে পারে না। চলমান ও ঘূর্ণায়মান যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করা, অথবা এধরনের পরিবেশে চলাফেরা করতে হলে এ্যাপ্রোনকে শরীরের সাথে আঁটোসাঁটোভাবে পরিধান করতে হবে। বিশেষ ধরনের যেমন- মোল্ডিং, ব্লাস্টিং, পেইন্টিং, ওভারহোলিং ইত্যাদি কাজ করার সময় শরীরকে সম্পূর্ণভাবে আবৃত করার প্রয়োজন। কলকারখানা ও অন্যান্য কর্মস্থলের এ প্রকৃতির কাজকর্ম করার জন্য কভার অল (Cover all) ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়।
৯. পতনজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধী সরঞ্জাম (Equipment for the Prevention of all Accidents) : সংস্কার, নির্মাণ ও মেরামত কাজে নিয়োজিত কর্মীগণকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমি থেকে উচ্চতায় বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চতায় কাজ করার সময় কর্মীগণের অসতর্কতা এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার না করার ফলে মারাত্মক বা প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে। যে সমস্ত কাজকর্মে ব্যক্তি এবং বস্তুর পতনজনিত দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে, সেসব ক্ষেত্রে পতন প্রতিরোধের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেকোনো উচ্চতায় উঠানামা, কাজকর্ম এবং চলাফেরা করার সময় পতন প্রতিরোধের জন্য হার্নেস (Harnes) এবং সেফটি বেল্ট (Safety belt) ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন- দুর্গম এলাকায় প্রবেশ, অগ্নিকান্ড ও ভূমিকম্পের পর উদ্ধার কাজ, সুউচ্চ স্থানে উঠানামা ইত্যাদি পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য বিপদ মোকাবিলার জন্য লাইফ লাইন (Life line) ব্যবহার করাতে হবে। শরীরের সাথে পতন প্রতিরোধী সরঞ্জাম এমনভাবে আটকাতে হয়, যাতে পতনের সময় শরীরে ফাঁস না লাগে। তা ছাড়া সেফটি বেল্ট ও হার্নেস উচ্চ ঘাতবল সহ্যকারী পদার্থ দিয়ে তৈরি করতে হবে। পতন প্রতিরোধী সরঞ্জামের কার্যকারিতা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পরীক্ষা করতে হবে।
১০. শ্বাসপ্রশ্বাসের নিরাপত্তা সরঞ্জাম (Respiratory Protective Equipment) : কোনো স্থান হতে শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য ক্ষতিকর এমন বস্তুকে অপসারণ করতে, অথবা শ্বাসকার্যে বিপদ সৃষ্টি করে এমন পদ্ধতির বিচ্ছিন্নকরণের জন্য এ ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া কোন ভেসেল বা অন্য কোনো আবদ্ধ পাত্র হতে চোয়ানো বা নির্গত ক্ষতিকর তরল, চাপপূর্ণ পাইপ লাইন, বাষ্প, ধোঁয়া, গ্যাস ইত্যাদির ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া হতে শ্বাস ক্রিয়াকে রক্ষার জন্যও নিরাপত্তা সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়।
নিম্নে বিভিন্ন ধরনের কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী শ্বাসপ্রশ্বাস সরঞ্জামের নাম উল্লেখ করা হলো।
• গ্যাস মাস্ক (Gas mask) ।
• অ্যাব্রেসিভ ব্লাস্টিং হেলমেট (Abrasive blasting helmet)।
• মেকানিক্যাল ফিল্টার রেসপিরেটর (Mechanical filter respirators) |
• কেমিক্যাল কাট্রিজ রেসপিরেটর (Chemical cartridge respirators) |
• হোজ মাস্ক (Hose mask)।
• সেল্ফ কনটেইনড ব্রিদিং অ্যাপারেটাস (Self contained breathing apparatus) |
• এয়ার লাইন রেসপিরেটর ( Air line respirator)।
আরও দেখুন...